ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়, পার্ক, উদ্যানে ঘুরলে দেখা যায় কিছু কিছু লোক ভাগ্য পরীক্ষা করেন। অনেকগুলো খামে ভাগ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় লিখা থাকে এবং একটি টিয়া পাখি যে খামটি তুলে, তাই নিজের ভাগ্য বলে চালিয়ে দেয়া হয়। মাঝে মাঝে কি মনে হয়, কেউ যায় ভাগ্য পরীক্ষা করতে? যায়। অনেকেই যায়। এইরকম ভাগ্য পরীক্ষা করতে অনেকেই আসেন ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে। আশেপাশে মানুষদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো করতে দেখে না বুঝেই চলে আসেন কোর্স করতে। ভালোমতো স্কিল ডেভেলপ না করেই ঢুকে পড়েন মার্কেটপ্লেসে; যদি একটা কাজ পাওয়া যায় ! যদি মাস শেষে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করা যায় ! ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ভাগ্য পরীক্ষার জায়গা না। দক্ষ লোকের কাজ করার জায়গা।
আচ্ছা, এই যে লোকটি ভাগ্য পরীক্ষার ব্যবসা করছেন, উনি কেনো অন্য কোনো প্রফেশনে যাচ্ছেন না? উনি কেনো ব্যবসার পরিধি বড় করছেন না? উনি কেনো অন্য লোকেশনে যাচ্ছেন না? কারন, উনার অন্য কোনো স্কিল নেই। উনি অন্য কোনো কাজ করতে জানেন না। উনার ব্যবসা, বিনিয়োগ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নেই। উনি অন্য লোকেশন এবং সেখানের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত নন। নতুন জায়গায় গিয়ে মানিয়ে নেয়ার মতো সামর্থ্য উনার নেই। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর অনেকটাই এমন। একটি স্কিল নিয়ে বসে থাকলে আপনি সাময়িক ভালো করতে পারবেন কিন্তু একটা সময় পরে নতুন দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে টিকে থাকা কষ্ট হয়ে যাবে। দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন নতুন মার্কেটপ্লেসে কাজের সন্ধান করতে হবে। নতুন ক্লায়েন্ট খুজতে হবে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নতুন স্কিল শেখার পিছনে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রতিনিয়ত রিসার্চ এর মাধ্যমে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে হবে।
একটা জিনিস কি খেয়াল করেছেন, যে সকল লোকজন ভাগ্য পরীক্ষার ব্যবসা করেন বিভিন্ন পার্কে, উদ্যানে বা রাস্তার মোড়ে, তাদের কাছে পড়াশুনা জানা, শিক্ষিত মানুষজন খুবই কম যান। এতোটাই কম যে সহজে চোখে পড়েনা। কিন্তু কেনো যায় না ভেবে দেখেছেন? কারন কর্ম পরিবেশের অভাব, সুন্দর উপস্থাপনার অভাব। আপনি যতো বেশী পড়াশুনা করবেন, যতো বেশী বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে জানবেন, ততোই সুন্দর জিনিসের প্রতি আপনার আকর্ষণ বাড়বে। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরেও অনেকটা তাই। মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে হলে, টিকে থাকতে হলে, ক্লায়েন্টর চোখে পড়তে হলে আপনার প্রয়োজন একটি সুন্দর পোর্টফলিও। আপনার পোর্টফলিও ক্লায়েন্ট এর কাছে রুচিবোধ এর প্রকাশ করবে। কাজের প্রতি আপনার ডেডিকেশন, প্যাশন সম্পর্কে অবগত করবে। যেখানে সেখানে, যেমন তেমন প্রোফাইল আর পোর্টফলিও নিয়ে বসে পড়লে, বিড করলে কোনো শিক্ষিত ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দিবে না। সেই পরিবেশ আপনাকেই গড়ে তুলতে হবে।
একটু অন্যভাবে ভেবে দেখুন, অনেক শিক্ষিত মানুষজন ভাগ্য পরীক্ষা করতে যায়। তবে তারা কিন্তু যায় বসুন্ধরা সিটি, পান্থপথ এর মতো জায়গায়। বেশ কিছু নামকরা লোক আছেন, যাদের বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখা যায়। অনেক বড় বড় তারকারা তাদের ব্যবসার প্রচার করেন। বিজ্ঞাপনের কারনে তাদের ব্যবসার বিশ্বাসযোগ্যতা সাধারন মানুষের কাছে বাড়ে। মানুষজন হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন কিছু পাওয়ার আশায়। কিন্তু কেনো করেন? কেনো তাদের কাছে শিক্ষিত মানুষজন যায়? কারন, তাদের যোগাযোগের দক্ষতা, বিজ্ঞাপন এবং সুন্দর উপস্থাপনা। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরেও যদি আপনি সফলতা লাভ করতে চান এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। নিজের দক্ষতা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। বিজ্ঞাপন দিতে হবে ফেসবুক, লিংকডিন, টুইটার সহ বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়াতে। আপনি যে কাজই করেন না কেনো, শুধুমাত্র যোগাযোগে দক্ষ হলে ক্লায়েন্ট আপনার কাছে আসবেই।
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে প্রফেশনালি কাজ করার একটি মাধ্যম। এটি কোনো ভাগ্য পরীক্ষা করার জায়গা না যে একটি টিয়া পাখি এসে বলে দিলো আপনি প্রফেশনাল ডিজাইনার বা ডেভেলপার হবেন, আর হয়ে গেলেন। সফলতা একদিনে আসেনা। এর জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম আর ধৈর্য। পাশাপাশি স্মার্ট কমিউনিকেশন আর সুন্দর পোর্টফলিও।
Leave a Reply