এতদিন আমরা B2B কিংবা B2C বিজনেস মডেল সম্পর্কে জেনে এসেছি।
B2B বিজনেস মডেলে, এমন একটি মডেল যেখানে একটি কোম্পানী অন্য আরেকটি কোম্পানির কাছে তার পণ্য বা সেবা বিক্রি করে। কখনও কখনও সেখানে ক্রেতা এন্ড ইউজার হয়, কিন্তু ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রেই ক্রেতা ভোক্তাদের কাছে পুনরায় তা বিক্রি করে। উদাহরণস্বরূপ, স্যামসাং চিপসেট এর কথা বলা যায়। আইফোন উৎপাদনে অ্যাপলের বৃহত্তম সরবরাহকারী কিন্তু স্যামসাং। তাছাড়াও অ্যাপল ইন্টেল, প্যানাসনিক এবং সেমিকন্ডাক্টর প্রযোজক মাইক্রোন টেকনোলজির মতো সংস্থাগুলির সাথে B2B সম্পর্কও রাখে।
B2C বিজনেস মডেলে, এমন একটি মডেল যেখানে একটি কোম্পানী তার পণ্য বা সেবা গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে যারা ঐ পণ্য বা সেবার শেষ ব্যবহারকারী। B2C কোম্পানিগুলির একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে এভাবে: কোকা-কোলার মতো ব্র্যান্ডগুলি সাধারণত তাদের তৈরি পণ্যগুলি খুচরা বিক্রেতা বা পাইকারী বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে, যারা পরে এন্ড ইউজার এর কাছে বিক্রি করে। একটি কোকের বোতল ক্রয় করার জন্য আপনি বা আমি অর্থাৎ যারা এন্ড ইউজার তারা কিন্তু কোকা-কোলা কোম্পানীকে কল করব না বা তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে কেনাকাটা করার কোনো সুযোগ পাবো না। সেক্ষেত্রে কি করবো আমরা, হয়তো কোনো মুদি দোকান, সুপার শপ কিংবা কোনো কর্নার স্টোরে গিয়ে কোকা কোলা কিনবো। কোকা-কোলা একটি B2C কোম্পানি, গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিক্রি করে, কিন্তু তারা D2C কোম্পানি নয়, সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে না। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো তারা কোনো ইন্টারমিডিয়ারির মাধ্যমে এন্ড ইউজার এর কাছে বিক্রি করছে।
এখন ব্যাপারটা যদি এমন হতো মাঝের ইন্টারমিডিয়ারি গুলো নাই হয়ে যেতো এবং কোকা কোলা কোম্পানি ডাইরেক্ট তাদের প্রোডাক্ট এন্ড ইউজার এর কাছে বিক্রি করছে। আর ঠিক এই ব্যাপারটি হলো D2C
D2C ব্যাপারটি আসলে কি ?
একটি কোম্পানি তার নিজস্ব সুবিধায় একটি পণ্য উৎপাদন করে, পাশাপাশি এটি তার নিজস্ব চ্যানেলের মাধ্যমে এন্ড ইউজার এর কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। D2C হল মধ্যস্থতাকারী ছাড়া শেষ গ্রাহকের কাছে প্রস্তুতকারকের পণ্য বিক্রির উপর ভিত্তি করে একটি বিজনেস মডেল।
D2C হল একটি কৌশল যেখানে নির্মাতারা ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে তাদের পণ্য তৈরি, বিপণন এবং বিক্রি করার এন্ড-টু-এন্ড নিয়ন্ত্রণ রাখে। D2C মডেলটি মধ্যস্থতাকারীকে বের করে দেয়, যা কোম্পানীকে তাদের ব্র্যান্ডের উপর আরও নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। D2C মডেলে কিছু সুবিধা আছে যেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ব্র্যান্ড এবং কনজুমার এনগেজমেন্টের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।
প্রথাগত ম্যানুফ্যাকচারার ও রিটেইলার সম্পর্কে ব্র্যান্ড ব্যাপারটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুবই সামান্য জায়গা থাকে। যদিও পণ্যের প্যাকেজিং, সাপ্লাই এবং অন্যান্য মার্কেটিং কার্যক্রমের উপর কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণ থাকে, কিন্তু ভাবুনতো একবার পণ্যটি রিটেইলার বা মুদি দোকানদারদের হাতে চলে যাওয়ার পর সেলস কে কোম্পানী কতটুকু প্রভাবিত করতে পারে? হা হয়তো কিছু ইন্সেন্টিভ কিংবা গিফটের ব্যবস্থা থাকে তা সত্ত্বেও সেলস , এন্ড ইউজারের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে বা ডেটা সংগ্রহ করতে কিন্তু কোম্পানী পারে না। আপনি যতই মার্কেটিং বা এডভার্টাইসিং এর জন্য খরচ করেন না কেন দিন শেষে কিন্তু ওই মুদি দোকানদারেরাই আপনার পণ্যটিকে এন্ড ইউজারের কাছে উপস্থাপন করে।
ইনোভেশনের আরো বেশি সুযোগ পাওয়া যায়
বেশিরভাগ রিটেইলার পণ্য বিক্রি করার সময় একটি নিদৃষ্ট সেলস পিচ অনুসরণ করে। তারা প্রায়ই নতুন পণ্য বিক্রি করতে দ্বিধাবোধ করে কিংবা করতেই চায় না। ট্রাডিশনাল আইটেমগুলোই বিক্রি করতে চায়। তখন যে ব্যাপারটি ঘটে তা হলো কোম্পানিগুলো তাই উৎপাদন করে দোকানিরা বা রিটেইলাররা যা চায়। ইনোভেশনের কোনো জায়গা থাকে না। D2C নির্মাতাদের একটি ছোট স্কেলে নতুন পণ্য চালু করতে সহায়তা করে, পাশাপাশি ডাইরেক্ট ইউজার ফিডব্যাক পেতে সহায়তা করে, যার উপর ভিত্তি করে পণ্যের প্যাকেজিং থেকে শুরু করে টেস্ট বা এডভার্টাইসিং এ পরিবর্তন আনা যায়। সর্বোপরি উন্নতি সাধিত হয়।
গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ে এবং তাদের ডেটাতে সরাসরি অ্যাক্সেস পাওয়া যায়।
কাস্টমারের সাথে ডাইরেক্ট যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেটা হয় সেটা হলো তার প্রত্যেকটি ডিসিশন সম্পর্কে জানা যায়, কেন কিনছে , কতটা কিনছে , কতটা দেখে কিনছে , এবং কিনার সাথে সাথে কেমন ফীল করছে , কিনার পর এবং ব্যবহার করার পর তার অনুভূতি কিরকম , আফটার সেলস সার্ভিস এ সে কি চায় , কতটুকু খুশি সে এই সেলস সার্ভিসে। তাছাড়াও তার ফোন নম্বর , ইমেইল এড্রেস , সোশ্যাল মিডিয়া, বায়িং বিহেবিওর সম্পর্কে জানা যায়। যা পরবর্তীতে হেল্প করে কোম্পানিকে নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আনতে কিংবা এক্সিস্টিং প্রোডাক্ট এ উন্নতি করতে।
বেশি মার্জিন পাওয়া যায়
মধ্যস্বত্বভোগীদের যদি প্রসেস থেকে বাদ দিয়ে কাজ করা যায় তবে বেশি মার্জিন অর্জন করা সম্ভব। একজন মধ্যস্বত্বভোগী(ডিস্ট্রিবিউটর) কোম্পানীর পণ্য বিক্রি করার অর্থ হল:
কোম্পানীর প্রোডাকশন কস্ট + কোম্পানীর প্রফিট মার্জিন + ডিস্ট্রিবিউটর মার্কআপ পার্সেন্টেজে + রিটেইলার মার্জিন = এমআরপি।
এই সূত্র থেকে বুজতে পারছেন যদি D2C মডেলে বিসনেস করা যায় তবে কোম্পানীর প্রফিট মার্জিন কতটা বেড়ে যায়।
বাজার প্রসারিত করার সুযোগ
D2C মডেলে বিজনেস করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কোম্পানী যেকোনো জায়গা থেকে বিশ্বব্যাপী তার সেলস করতে পারে। নিদৃষ্ট কোনো গন্ডির মধ্যে থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। “গো গ্লোবাল” কথাটি D2C মডেলের সাথে সম্পূর্ণভাবে যায়। আর এতে যা হবে তা হলো আপনার মার্কেট সাইজও বেড়ে গেলো।
Zamiar Shams
Co-Founder & Head of Business
Leave a Reply