যখন আমরা ওয়েব ডিজাইন বা ডেভেলপমেন্ট সেক্টর কে প্রফেশনাল কাজের জন্য নিজের ক্যারিয়ার ডেভ্লপমেন্ট এর কথা চিন্তা করি, এ সময় নিজের পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করতে, ওয়েবসাইটটিকে অর্থবহ এবং আমাদের ক্লায়েন্টদের জন্য উপযুক্ত করে তোলার জন্য আমাদের কিছু মূল বিষয় মাথায় রেখে এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করে ওয়েবসাইটটি বানাতে হবে। পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের প্রসঙ্গ এবং কাজ করার প্রধান ক্ষেত্র সাজানোর জন্য এখানে মূল লক্ষ গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরছি –
১। প্রথমে আপনার নিজের পরিচয়, ডেভ্লপার হিসেবে আপনার কিছু অর্জন, এবং নিজের স্কিল্ গুলো তুলে ধরুন –
– একজন ক্লাইন্ট যখন আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে, তখন তারা জানতে চায় মূলত আপনি কে। এখেত্রে আপনার পরিচয় তুলে ধরার সাথে আপনার কিছুটা ব্যক্তিত্ব যোগ করুন যেমন আপনার একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল পিকচার, নিজের একটি ভাল হেডশট দিয়ে, এতে করে আপনার নিজের প্রতি কনফিডেন্স, আপনি কতটা গোছানো এবং আপনার ড্রেস-আপ মূলত আপনার কমুইনিকেশন এবং দক্ষতা ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
২। আপনার সিভি দেখান
– আপনার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটটি মূলত আপনার সিভির মতন কাজ করে থাকে যা কিনা একটি অনলাইন ভার্শন। ঠিক আপনার সিভিতে আপনি যেমন ভহাবে নিজের সব স্কিল এবং কাজের স্যাম্পল তুলে ধরেন, একই ভাবে সিভির মতো করে নিজের স্কিল এবং পোর্টফলিও গুলোকে আপ-টু-ডেট করে ওয়েবসাইটে সেকশন অনুযায়ী আপলোড করতে হবে। আপনি কী করতে পারেন তা ক্লাইন্টের কাছে পরিষ্কার করে তুলে ধরার জন্য এই সিভি সেকশনটি জরুরি। আপনার পেশাদারিত্ব এবং প্রতিভা প্রদর্শনের একটি আপনার পোর্টফলিও ওয়েবসাইটের সিভি সেকশন কে প্রতিনিয়ত আপনার আপডেট রাখা উচিত।
৩। আপনার লক্ষ যাকে আমরা মিশন বা ভিসন বলে থাকি –
– আপনার এবং আপনার ওয়েব রিলেটেড সার্ভিস গুলো এবং আপনার প্রফেশনাল কর্মজীবন সম্পর্কে লক্ষ বা মিশন সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখুন যা আপনার পোর্টফলিও ওয়েবসাইটে কিছু অতিরিক্ত মূল্য যোগ করতে পারে। নিজের একটি ছোটখাট বায়োডাটা এখেত্রে অনেক উপযোগী।
৪। আপনার বানানো পোর্টফলিও / কাজ গুলোর বেস্ট প্রেসেন্টেশন
– প্রথমে আপনার সম্পূর্ণভাবে কমপ্লিট করা এমন কিছু সেরা কাজ প্রদর্শন করুন যাতে ক্লাইন্ট আপনার কাজের ধরন এবং কোয়ালিটি দেখে মুগ্ধ হতে পারেন। প্রজেক্ট গুলো বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির কি কি স্কিল এর সাহায্যে আপনি তৈরি করেছেন তার একটি স্পষ্ট বিবরণ দিন এবং ডিজাইন এন্ড ডেভ্লপমেন্ট প্রক্রিয়াটি আপনি ক্লাইন্ট রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিভাবে সম্পন্ন করেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করবেন। অন্য কারো সাইট ডিজাইন কপি করবেন না কারণ আপনি হয়ত মনে করছেন এটি ভাল দেখাচ্ছে, কিন্তু এরকম কাজ করা থেকে বিরত থেকে নিজের করা কাজ গুলোর প্রোজেক্ট প্রেসেন্টেশন জগ করার চেষ্টা করা ভালো। এতে আপনি নিজের সাথেই মানুষিক ভাবে কনফিডেন্ট থাকতে পারবেন। পোর্টফলিও সেকশন এ আপনি যত বেশী পারফেক্ট কাজ প্রদর্শন করতে পারবেন আপনার ক্লাইন্টদের সুবিধা হবে ডেভ্লপার হিসেবে আপনাকে তার কাজের জন্য নির্বাচন করতে।
5. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন এবং নিজের সাথে কমুইনিকেশন এর জন্য তথ্য জগ করন –
– ক্লাইন্টরা কীভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে তা যদি আপনার সাইটে পরিষ্কার করে আপনি না বলে থাকেন, তবে তারা খুঁজে বের করার জন্য খুব বেশি চেষ্টা করবে না। ক্লাইন্টরা কীভাবে আপনার কাছে পৌঁছাতে পারে তা বলার জন্য আপনার হোমপেজে অথবা কন্টাক্ট পেগ টিকে কিছু মিনিংফুল কন্টেন্ট যোগ করুন। আপনার ফেসবুক, লিঙ্কডইন, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ অ্যাকাউন্ট এর লিঙ্ক যোগ করুন। বিভিন্ন ক্লাইন্ট যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি পছন্দ করে, তাই তারা যেই মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে পারে এমন কয়েকটি সসাল-মিডিয়া থাকলে ভাল। পাশাপাশি কন্টাক্ট পেজ এ একটি কন্টাক্ট-ফরম রাখলে সেটার মাদ্ধমেও আপনার সাথে আপনার ক্লাইন্টরা যোগাযোগ করতে পারবেন।
৬। আপনার ওয়েবসাইটের ইউজার ইন্টারফেসকে ভাল ভাবে ফুটিয়ে তুলুন –
– ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণরূপে লাইভ সারভারে ডেপলয় দেয়ার আগে ওয়েবসাইটটির স্পিড অপটিমাইজেশন করে নিন যার জলে দ্রুততম সময়ে সাইটটি লোড নিতে পারে। ইউজার ইন্টারফেসটিতে কালার কম্বিনেশন এবং সহজে বোধগম্য এমন ডিজাইন ব্যাবহার করুন যাতে ইউজাররা আপনার পোর্টফলিও ওয়েবসাইটটি দেখে আকৃষ্ট হতে পারেন।
৭। নতুন বিষয়বস্তু তৈরি করুন
– Google নতুন বিষয়বস্তু পছন্দ করে, তাই আপনার সাইটের সার্চ র্যাঙ্কিং উন্নত করার একটি দুর্দান্ত উপায় হল এটিকে একটি ব্লগের মাধ্যমে আপ-টু-ডেট রাখা। সর্বদা আপনার পোস্টগুলি প্রাসঙ্গিক এবং আপনি যা করছেন তার সাথে লিঙ্কযুক্ত রাখুন, এই কারণেই লোকেরা শুরু করার জন্য আপনার সাইটের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভিজিটরদের মতো Googleও ভিডিও পছন্দ করে – একটি ছোট, আকর্ষক ভিডিও আপনার সাইটে লোকেদের বেশিক্ষণ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৮। আপনার ক্লায়েন্টদের সম্পর্কে ধারনা দিন –
আপনার কাজের / পোর্টফলিও গুলোর সাথে সম্পৃক্ত কোম্পানি অথবা ক্লাইন্টদের কিছু লোগো অথবা টেস্টিমোনিয়াল সেকশন যোগ করুন যার ফলে নতুন ক্লাইন্টরা আপনার পূর্ববর্তী ক্লাইন্ট এর সম্পরকে একটি সুস্পষ্ট ধারনা পেতে পারে। এই টেস্টিমোনিয়াল সেকশনটি একটি পোর্টফলিও ওয়েবসাইটের জন্য অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
9. আপনার সাফল্য গুলো তুলে ধরুন এবং যদি কোন রেফারেন্স থাকে তা যোগ করুন –
আপনি কতটা সাকসেসফুল হতে পেরেছেন এবং আপনার ক্যারিয়ার এর অন্যতম সাফল্যের দিক গুলো আপনার ওয়েবসাইটে তুলে ধরুন। আপনার ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে সরাসরি পাওয়া কোন ভিডিও রিভিও, অথবা আপনার সার্ভিস গুলোর পর্যালোচনা হিসাবে ভালো কিছু ক্লাইন্ট রিভিউ যোগ করতে পারেন যা অনেক বেশী কাজে দিবে আপনার ভবিষ্যৎ এ নতুন ক্লাইন্ট পাওয়ার জন্য। এই রিভিউ গুলো বিশ্বাস, আস্থা এবং সত্যতার একটি ভিত্তি তৈরি করে, আরও প্রমাণ করে যে আপনার অভিজ্ঞতা এবং উচ্চ মানের প্রোজেক্ট তৈরি করার ক্ষমতা।
10. লাইভ উদাহরণ
আপনার পূর্ববর্তী ক্লায়েন্টরা বর্তমানে ব্যবহার করছেন এমন কিছু ওয়েব সাইটের সাথে লিঙ্ক আপনার পোর্টফলিও তে যোগ করুন। একজন ডিজাইনার এবং ডেভ্লপার হিসাবে আপনার দক্ষতাকে আরও প্রদর্শন করার জন্য নতুন ক্লাইন্টরা যাতে আপনার কাজ গুলোকে সরাসরি দেখতে পারেন তার জন্য এটি অত্যাবশ্যক। ক্লাইন্টরা যাতে বুঝতে পারে যে আপনি আসলেই ততটা ভালো, যতটা আপনি বলছেন।
আশা করছি উপরের প্রত্যেকটি বিষয় মাথায় রেখে একটি পোর্টফলিও ওয়েবসাইট বানালে ওয়েবসাইটটি অবশ্যই অর্থবহ এবং আপনার লক্ষে পুঁছানর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।
ফয়সাল হামিদ হিমেল
ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার, মেন্টর, কো ফাউন্ডার শিখবে সবাই
Leave a Reply